ফকীহুল মিল্লাত
এক যে ছিল রাখাল বালক মক্কার নগরীতে,
বকরি চড়াতে ভোরে চলে যেত, ফিরত সন্ধ্যা রাতে।
মক্কানগরী ধরণী-কেন্দ্র, কেন্দ্র সভ্যতার,
মুহাম্মদ যে মানবজাতির মুক্তির অবতার
খোদার বিধান শ্রেষ্ঠ বিধান মুহাম্মদের পরে,
নাযিল হচ্ছে আসমান হতে একটু একটু করে,
রাখাল বালক জানে না সে কথা, রাখে না সেই খবর,
বকরি চড়ায়ে ফিরতে ফিরতে সূর্যাস্তেরও পর।
সারাদিন পর ঘরে ফিরে এসে, ক্লান্ত শরীর-মন,
ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় সে; জানে না কাল কখন
তকদির তার নিয়ে যাবে তারে নিত্যদিনের মতো,
রোজ যে পাহাড়ে ভোরবেলা ওঠে বকরি চড়াতে যেত।
***
আজকের এই দিন,
বালকের তরে নয় এইদিন যেমন নিত্যদিন।
অন্যদিনের মতো আজকেও সূর্য ওঠার আগে,
পেছনে রাখাল বালক সামনে বকরির পাল ভাগে।
জানে না রাখাল বালক জানে না আজকের এই দিনে,
তার আত্মার নতুন জন্মদিন এ মরূদ্যানে।
সূর্য তখন মধ্য গগণে বসেছে পূর্ণ রূপে,
সহসা বালক চেয়ে থাকে সেই পূর্ণ সূর্য ঢেকে,
গায়ে আজারির চিন্,
দুজন মানুষ আসছে এদিকে ক্লান্ত ধূলি-মলিন।
মহাবিশ্বের চির বিস্ময় মক্কার আলামিন,
সাথে তার সাথী সর্বপ্রথম আমিরুল মুমিনিন।
বালক চিনে না তারে,
যার তরে আসে আকাশের মেঘ খুশির ডানায় উড়ে।
ক্লান্ত নবীজি দুধ চান এই রাখাল ছেলের কাছে,
সে বলে, ‘এ যে আমানত, এ তো গচ্ছিত মোর কাছে।’
খুশি হন নবী, তারপর তিনি নববী মোজেযা দেখান,
বালক তখন নির্বাক, হয় হয়রান পেরেশান।
***
যে নামেই দিই ডাক,
ইবনে মাসুদ! ইবনে উম্মে আব্দ!
ইতিহাস বলে তুমি আমাদের ফকীহুল মিল্লাত।
সেইদিন তুমি অবাক হয়েছ, মোরাও অবাক হই,
ভেবে পাই না ক তোমার জ্ঞানের সীমা-পরিসীমা কই!
জানি তব জ্ঞান সীমিত, কিন্তু কোথা এই সীমানা?
ইতিহাস জানে, তোমার জ্ঞানের সীমানা কেউ জানে না।
ইলমে অহির মোবারক এক ঝরনাধারার মুখ,
খোদার হুকুমে করেছ তুমি তা অনন্ত উন্মুখ।
এই ঝরনার ধারা হতে বহে কত নহরের ধারা,
ইলমে অহির তৃষ্ণা মেটায়, নবীর ওয়ারিস যারা।
মেটে না তৃষ্ণা, বেড়ে যায় আরও তোমার আবে হায়াতে,
ইলমে অহির তৃষ্ণা মেটাবে, কোন্ সে পানশালাতে?
তোমার ঝরনা-নহরসমূহ বয়ে চলে অবিরত,
নহরের তীরে প্রাসাদ-কেল্লা গড়ে ওঠে শত শত।
নয় সে প্রাসাদ ইট-পাথরের, নয় হীরা-জহরতের,
এ প্রাসাদ ¯্রফে ‘কা-লাল্লাহ’র ‘কা-লার রাসুলে’র।
***
ফকীহুল মিল্লাত!
জানি না সে কোন্ রাত,
চলে গেলে তুমি, কীর্তি তোমার অমর জিন্দাবাদ।
হিজরি বত্তিরিশের কোন্ এক নামহীন রজনীতে,
নবীর নগরী মদিনার এক জীর্ণ শীর্ণ খাটে,
শেষ হল তব জীবন-সফর এই পৃথিবীর পথে,
শুরু হল এই সফর আবার ফেরদাউসের রথে।
ফকীহুল মিল্লাত !
তোমার সিরাত পাঠ করে যেন মেটে না কখনো স্বাদ।
ইতিহাস চিরবিস্ময় নিয়ে বর্ণনা করে যাবে,
যতদিন এই ধরার বুকেতে চন্দ্র-সূর্য রবে।
কবিতাটি আসহাবে মুহাম্মাদ সা. বই থেকে সংগৃহিত